আমাদের কিছু কথা

আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য হলো ঈমান এবং আমলসহ সু-শিক্ষা দেয়া যা বর্তমান জামানায় খুব কম জায়গাতেই দেয়া হয়ে থাকে। ঈমান শিক্ষার জন্য নির্ভেজাল জ্ঞানের ও নিয়মিত আমলের প্রয়োজন। কাজেই আমাদের শিক্ষা দানের মাধ্যম হচ্ছে পুরোপুরি কুরআন ও সুন্নাহ (সহীহ হাদিস) ভিত্তিক এবং জ্ঞান অর্জনের সাথে সাথে তা আমল করানোর মাধ্যমে বাস্তবে পরিণত করা আমাদের প্রধান লক্ষ্য। কুরআন-সুন্নাহ আকড়িয়ে ধরাকে এবং তদানুযায়ী আমল করাকে আমরা সর্বাধিক প্রাধান্য দেই।

মাদ্রাসাটি পুরোপুরি আবাসিক। এখানে বাংলাদেশের বিভিন্ন জিলা থেকে আসা ছাত্রীরা অধ্যয়ন করছে। সাত বৎসর বয়স থেকে শুরু করে কলেজে পড়া ও হেফজ পাশ করা মেয়েরা এবং বিবাহীতা নারীরা এখানে এসে ভর্তি হয়। কম বয়সী মেয়েদেরকে নিয়মিত শ্রেণী ভিত্তিক শিক্ষা দান করা হয় অর্থাৎ তারা নার্সারী থেকে শুরু করে ক্রমান্নয়ে উপরের দিকে উঠতে থাকে। কিন্তু বেশি বয়সের, বিশেষ করে, যারা স্কুল, কলেজ বা হেফজ পড়ে আসে তাদের জন্য শারীয়া শ্রেণী নামে এক বিশেষ শ্রেণী খোলা হয়েছে। ইহা করা হয়েছে এই বিবেচনা করে যে অনেকে হয়ত আরবী পারেনা, আবার কারও হয়ত আরবীতে দক্ষতা আছে কিন্তু কুরআন-হাদিসের জ্ঞান নেই তাহলে এরা কোন্ শ্রেণীতে পড়বে? কাজেই তারা যে বিষয়টি ভাল পারেনা সে বিষয়টি নিচের শ্রেণী থেকে পড়বে এবং যে বিষয়টি ভাল পারে সে বিষয়টি উপরের শ্রেণী থেকে পড়বে। শুধু তাই নয়, কেউ চাইলে সে তার নিজের জন্য যে কোন বিষয় বেছে নিতে পারবে। ধরা যাক রিয়াদুস-সালিহীন; এই হাদিসের কিতাবটি তৃতীয় শ্রেণী থেকে শুরু করে ১০ম/১১দশ শ্রেণী পর্যন্ত পড়ানো হয়। একজন শারীয়া শ্রেণীর ছাত্রী চাইলে সে এই রিয়াদুস-সালিহীন একাধিক শ্রেণীর সাথে পড়তে পারবে।

কুরআন শিক্ষা আমাদের শিক্ষা

প্রতি শ্রেণীতে কুরআন মুখস্থ করানো করা হয়। আরবী ব্যাকরণ, সাহিত্য এবং কুরআন মুখস্থ, কুরআন রিডিং, তাজবীদ শিক্ষা এবং কুরআনের অর্থসহ তরজমা ভিন্ন ভিন্ন ঘন্টায় পড়ানো হয়। এক ঘন্টায় কুরআন মুখস্থ করানো হয় এবং একই সুরার তাফসিরসহ তরজমা অন্য ঘন্টায় পড়ানো হয়। কাজেই কোন সুরা যখন পড়ানো শেষ হয়ে যায়, তখন সুরাটির প্রতিটি শব্দের অর্থ, তরজমা এবং সুরাটিতে যেসব বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে তার সবই জানা হয়ে যায় এবং পরীক্ষায় তদনুযায়ী প্রশ্ন করা হয়, যেমনঃ ফেরেস্তাদেরকে আদম (আঃ)-কে সিজদা করতে আদেশ করলে ইবলিস যে কারণে সিজদা করেনি তা সুরা বাকারার আলোকে বর্ণনা কর।

(সুরা বাকারার ৩৪নং আয়াটিই এই প্রশ্নের উত্তর)

আল্লাহ তা‘আলা আদম (আঃ) ও হাওয়াকে যে শর্তে জান্নাতে থাকার অনুমতি দিয়েছিলেন তা সুরা বাকারার আলোকে বর্ণনা কর।

(সুরা বাকারার ৩৫নং আয়াটিই এই প্রশ্নের উত্তর)

পরীক্ষায় প্রশ্নের উত্তর তরজমাসহ আরবীতে লিখতে হয়। কেউ এভাবে নার্সারী থেকে দাওরা পর্যন্ত অধ্যয়ন করলে সে যে শুধু অর্থসহ কুরআনের হাফেজ হতে পারবে তাই নয়, সে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত পড়ে নিজেই কুরআনের অর্থ করতে পারবে এবং দাওরা শেষে কুরআনের যে কোন বিষয়ে সে সম্পর্কিত আয়াতগুলো অর্থসহ বলে দিতে পারবে, ইনশা আল্লাহ।

হাদিস শিক্ষা

এখানে তৃতীয় শ্রেণী থেকে রিয়াদুস সালিহীন এবং ৬ষ্ঠ শ্রেণী থেকে বুলুগ আল-মারাম শিক্ষা দেয়া হয় এবং ৮ম শ্রেণী থেকে দাওরা শেষ হওয়া পর্যন্ত শিক্ষা দেয়া হয় কুতুবে সিত্তার কিতাবগুলো অর্থাৎ বুখারী, মুসলিম, তিরমিদি, আবু দাউদ, ইবনে মাজা এবং সুনান নাসাঈ। প্রতিটি হাদিসের বিষয়-বস্তু অর্থাৎ ইহার করণীয়-বর্জনীয় বিষয়গুলো বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয় ও চিহ্নিত করা হয়। তারপর সেখান থেকে প্রশ্ন করা হয় এবং প্রশ্নের উত্তরগুলো হুবুহু আল্লাহর রাসুল (সাঃ) এর উক্তি অনুযায়ী লিখে দেয়া হয়।

যেমনঃ

কোনো এলাকায় মহামারী লাগলে রাসুল (সাঃ) যা করতে আদেশ করেছেন তা বর্ণনা কর। (রিয়াদুস সালিহীন হাদিস নং ১৭৯১-১৭৯২)

উত্তর: রাসুল (সাঃ) বলেছেন: "কোন এলাকায় মহামারী লাগার সংবাদ পেলে তোমরা সেখানে প্রবেশ করবে না। কিন্তু ইহা যদি তোমাদের স্থানে শুরু হয় তবে সে এলাকা ত্যাগ করবে না।"

রিয়াদুস-সালিহীন ও বুলুগ আল-মারামের প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ হাদিসগুলো অর্থসহ মুখস্থ করানো হয়।

এভাবে সব গুরুত্বপুর্ণ হাদিসগুলো থেকে ইসলামের প্রয়োজনীয় বিধানগুলো শিখানো হয় এবং মুখস্থ করানো হয়। কাজেই আমাদের অষ্টম শ্রেণীর একজন ছাত্রী ইসলামের বিধানের উপর যতটুকু জ্ঞান রাখে, আমাদের বিশ্বাস অন্য প্রতিষ্ঠানের কোন দাওরা পাশ করা আলিমেরও একই বিষয়ে ততটুকু জ্ঞান হয়না।

তাওহীদ, সঠিক জ্ঞান এবং আমল

নার্সারী থেকে দ্বিতীয় শ্রেণী পর্যন্ত “ছোটদের তাওহীদ“ নামক বই থেকে তাওহীদের মুল বিষয়গুলো শিক্ষা দেয়া হয় এবং “একজন মুসলিমের দৈনন্দিন জীবন“ নামক বই থেকে সালাত ও দৈনন্দিন জীবনের আমল সংক্রান্ত দু‘আসহ ও অন্যান্য বিষয় পড়ানো হয়। কাজেই দ্বিতীয় শ্রেণীতে কয়েক মাস অধ্যয়নের পর আমাদের একজন ছাত্রী আপনাকে শুধু যে দৈনন্দিন জীবনের আমলগুলোর কথা বলে দিতে পারবে তাই নয়, বরং আপনি তাদেরকে দেখতে পাবেন যে তারা রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী এসব আমল নিয়মিত সম্পাদন করছে। উদাহরণ স্বরপ: সকালে ঘুম থেকে উঠে কি বলতে হবে, টয়লেটে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়, ওজুর শুরুতে ও শেষে, খাবার শুরুতে ও শেষে, বাড়ি থেকে বের হওয়ার ও প্রবেশের সময়, মসজিদে প্রবেশ ও বের হওয়ার সময়, আজানের সময় ও আজানের শেষে, সকাল-সন্ধ্যায় ও রাতে কি বলতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এ ছাড়া সালাতের নিয়ম কানুনসহ রুকুতে, রুকু থেকে দাড়িয়ে, সিজদায়, দুই সিজদার মাঝে, বৈঠকে, সালামের পুর্বে এবং সালামের পরে যা বলতে হবে তা আপনাকে আমাদের একজন দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী অর্থসহ বলে দিতে পারবে, ইনশা আল্লাহ। এছাড়াও এরকম ছোটদের অনেককেই দেখতে পাবেন যে তারা নিজেদের ইচ্ছায় রাসুল (সাঃ)-এর সুন্নাহ অনুযায়ী দোহার সালাত আদায় করছে, সোমবার ও বৃহস্পতিবারে এবং চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে সিয়াম পালন করছে। আলহামদুলিল্লাহ!

উপরে উল্লেখিত বই দুটি আমরাই ছোটদের প্রয়োজন অনুযায়ী লিখেছি যাতে করে তাদেরকে তাওহীদ ও সঠিক জ্ঞান শিক্ষা দেয়া যায় এবং তাদেরকে আমলগুলো নিয়মিত করানো যায়।

আয়শা আমাদের সহীহ আকিদার ইসলাহুননিসা মহিলা মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্রী।

আয়শা আমাদের সহীহ আকিদার ইসলাহুননিসা মহিলা মাদ্রাসার ২য় শ্রেণীর ছাত্রী। সে তার প্রতিদিনের সকাল থেকে রাতে ঘুমানোর আগ পর্যন্ত আমলের বিবরণ দিচ্ছে।